প্রকাশিত: ১২/০৬/২০২০ ৪:৩৮ পিএম

১০ জুন পর্যন্ত ৩৫ জন শরণার্থী কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছেন, ৩ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মোট ৩০ জনকে আইসোলেশনে রাখা হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আরও অনেকেই আক্রান্ত রয়েছেন।
কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চাপিয়ে দেওয়া ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতারা।
তারা বলছেন, এতে করে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে রোহিঙ্গারা পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছেন না। কোভিড-১৯ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব। ফলে আতঙ্কে করোনা পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী।

গত বছরের শেষ দিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ফলে যোগাযোগ ও তথ্য জানার সীমাবদ্ধতা এই শরণার্থীদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে বাঁশের বেড়ায় বানানো ১০ বর্গমিটার আকারের একেকটি ঘরে সর্বোচ্চ আট-দশজন সদস্য একত্রে থাকেন। কয়েকটি ঘরের জন্য বরাদ্দ একটি বা দুটি টয়লেট আর কল; সেগুলোই সবাই মিলে ব্যবহার করছেন তারা। এমনকি করোনা মোকাবিলায় সাবানের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোরও অভাব এখানে।ক্যাম্পগুলোতে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে এই সংক্রমণ, এবং তখন স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে আর কিছু করতে পারবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ জুন পর্যন্ত ৩৫ জন শরণার্থী কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছেন এবং তিনজন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মোট ৩০ জনকে আইসোলেশনে রাখা হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে যে আরও অনেকেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক সংবাদ বিষয়টি উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সর্দি-জ্বর-কাশি হচ্ছে অনেকেরই। ফলে করোনার লক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন শরণার্থীদের অনেকেই। অনেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো এড়িয়ে চলছে, তারা ভয় পাচ্ছে হয়তো তাদেরকে আইসোলেশনের জন্য দূরে কোথাও সরিয়ে নেওয়া হবে।

পরিবার থেকে অনেক দূরে কোন কেন্দ্রে পাঠানো হবে এই ভয়ে গত সপ্তাহে দু’জন লোক পৃথক আইসোলেশন সেন্টার থেকে পালিয়ে গেছে।

শরণার্থী শিবিরে স্ত্রী, চাচা আর এক বছরের কন্যার সঙ্গে থাকেন মোহাম্মদ সাইফুল (২৫)। দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এখানে খুব দ্রুত কোন গুজব বা ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। একবার এক গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে, আইসোলেশনে নিয়ে মানুষকে মেরে ফেলা হবে। ডাক্তাররা নাকি এমন এক ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেলছেন। এমনকি যাদের করোনাভাইরাস নেই, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তাদের শরীরে নাকি ভাইরাস ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। এখানকার মানুষ কোনকিছু বোঝার চেষ্টা না করেই চোখ বুজে বিশ্বাস করে ফেলে।”

দ্য গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এর মধ্যেই শরণার্থীদের সুস্বাস্থ্য এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে, সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে এনজিওগুলোর কাজও। খাবার আর স্যানিটেশন এর মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি অব্যাহত আছে বলে জানানো হলেও, ক্যাম্পের এক বাসিন্দা জানালেন, তার এলাকায় টয়লেটগুলো পরিষ্কার করা হয়নি, গত সপ্তাহ থেকেই সেগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জাফা জানান, “সত্যি কথা বলতে কি, আমরা হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অনুশীলন করছি না কারণ যে এনজিওগুলো হাত ধোয়া, স্বাস্থ্যকর এবং স্যানিটেশনের অনুশীলন নিয়ে কাজ করে তারা ক্যাম্পে আসছে না।”

বার্মিজ রোহিঙ্গা সংস্থা ইউকে-র সভাপতি তুন খিন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে আমাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখানে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা উচিত যাতে লোকেরা মহামারী সম্পর্কে সংবাদ এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পেতে পারে।”

স্ত্রী আর এবং তিন সন্তানের সঙ্গে থাকেন আবু তাহির (৩৭)। তাহির বলেন, বাজার আর দোকান-পাটও সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সারা দিন একটা ছোট ঘরের মধ্যে বিচ্ছিন্ন থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

“আমার যদি কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়, তাহলে আমার পরিবারের কী হবে জানি না। আইসোলেশনে যেতে হলে সঙ্গে আমার পরিবারকেও রাখতে চাই আমি। আবার শুনলাম এই রোগের নাকি কোনো চিকিৎসাও নেই। তাহলে আর বিচ্ছিন্ন হয়েই বা কি লাভ হবে?”

“মিয়ানমার থেকে প্রাণ নিয়ে এতদূর পালিয়ে আসতে পেরেছি। কারণ সৃষ্টিকর্তা আমাদের দয়া করেছেন। ভবিষ্যতেও তিনিই দেখে রাখবেন”, এমন বিশ্বাস নিয়েই আছেন তাহিরের মতো শরণার্থী শিবিরের অনেকেই।

সুত্র :দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের চোরাই ১১টি মহিষ ১১লাখ ৫০হাজার টাকায় নিলামে বিক্রয়

মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে চোরাইপথে পাচারকালে কক্সবাজার উখিয়ার সীমান্ত পয়েন্ট থেকে ৬৪ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ...